জমির দলিল আছে দখল নাই। করণীয় কী? BDLAW ASK

জমির দলিল আছে দখল নাই। করণীয় কী?





জমির দলিল আছে, দখল নাই। কী করবেন? অথবা জমি থেকে বেদখল হলে কী করবেন?

আপনার কাছে জমির দলিল আছে, খতিয়ান আছে কিন্তু জমিটি ভোগ করতেছে অন্য কেউ। এ ক্ষেত্রে আপনি কী করবেন? এক্ষেত্রে আপনি কি জোর খাটিয়ে থানা পুলিশের মাধ্যমে জমির দখলে যাবেন নাকি আদালতে যাবেন; বুঝতে পারেন না। কোনটি করলে আপনি আপনার জমি ফেরত পাবেন?


প্রথমে দেখি আপনি আপনার জমি থেকে  কী কী কারণে বেদখল হতে পারেন?

  • প্রভাবশালী মহল কতৃক জোরপূর্বক বেদখল,

  • বেদখল হওয়ার সময় নাবালক ছিলেন,

  • অন্যান্ন মালিকেরা আপনার অংশ সহ বিক্রি করে দিয়েছে,

  • ওয়ারিশ হিসেবে আপনার ভাগ আপনি পাননি,

  • জমির মালিক জমি বিক্রি করার পর পুনরায় অন্য কাউকে বিক্রি করেছেন এবং সে ব্যক্তিই এখন দখলে আছেন

দখল উদ্ধারে যে আইনগুলি সম্পর্কিত:

  1. ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮; ধারাসমূহ: ১৪৪, ১৪৫
  2. সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭; ধারাসমূহ: ৮,, ৪২
  3. তামাদি আইন, ১৯০৮; ধারাসমূহ: ৫, ৮, ২৮



সাধারণত ভুক্তভোগী যেখানে প্রতিকার চাইতে পারে

১. এলাকার বা মহল্লার মাতব্বর বা সভাপতি, মেম্বার-চেয়ারম্যান বা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তি: 
এভাবে সালিশ বসিয়ে বিরোধের সমাধান করতে পারলে ভালো, তবে ঘুষের লেনদেন না করা উচিত। কারণ সালিশের সিদ্ধান্ত আদালতের কাছে গ্রহণযোগ্য নয় শুধু দু পক্ষ মেনে নিলেই এর গ্রহণযোগ্যতা থাকে। আর সালিশের মাধ্যমে সমাধান করতে গিয়ে যেন কোনভাবেই কাল ক্ষেপন না করেন। বিশেষ করে সর্বোচ্চ এক মাসের মধ্যে সমাধান করা ভালো।কারণ  কালক্ষেপন করার ফলে আপনি অনেক আইনি প্রতিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। 
দুষ্ট পক্ষের সালিশের নামে ষড়যন্ত্র ও করতে পারে যাতে করে কালক্ষেপন করে আপনার আইনি প্রতিকার পাওয়া থেকে বঞ্চিত করতে পারে। 

২. থানা
জমিজমার মালিকানা বা বিরোধ বিষয়ে থানা পুলিশের কোন ভূমিকা বা সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষমতা নেই। যদিও থানায় বসে কেউ কেউ জমি বিরোধের নিষ্পত্তির চেষ্টা করা হয়। অবশ্য এ ক্ষেত্রে ঘুষের লেনদেন থেকে বিরত থাকা উচিত কেননা থানার সিদ্ধান্ত দেয়ার কোন ক্ষমতা নেই যে কারণে এটি অমান্য করলে থানার কিছু করার থাকেনা। জমি বিরোধের ক্ষেত্রে পুলিশ আনুষঙ্গিক ভূমিকা পালন করে, আইন অনুযায়ী আদালতের নির্দেশ পালনে কাজ করে কিন্তু প্রত্যক্ষ ভাবে পুলিশের কোন ভূমিকা নেই। জমির মালিকানা ইস্যুতে একমাত্র দেওয়ানি আদালতকে একচ্ছত্র সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। কিন্তু জমি নিয়ে বিরোধের ফলে দাঙ্গা হাঙ্গামা সৃষ্টি হলে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে পুলিশ দায়িত্ব পালন করে।

৩. ফৌজদারি আদালত: 
বেদখল হওয়ার প্রথম শ্রেণীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৪৪ ও ১৪৫ ধারায় মামলা করা। আইনি প্রতিকার পার্টটি দেখুন।

৪. দেওয়ানি আদালত: 
এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে মামলা করা। আইনি প্রতিকার পার্টটি দেখুন।



প্রভাব খাটিয়ে থানা পুলিশ বা প্রভাবশালী ব্যক্তির মাধ্যমে জমির দখল নেয়ার চেষ্টা করা। একটি ভুল ধারনার অবসান। 

অনেকে মনে করেন, যেহেতু আমার দলিল আছে, খতিয়ান আছে সুতরাং আমার জমি আমি দখল করলে সমস্যা কি। অর্থাৎ কাগজে কলমে জমি যার তিনি জোর খাটিয়ে দখলের চেষ্টা করেন। তিনি মনে করেন, আমি জমির দখল চেষ্টা করলে বিরূপ পরিস্তিতি বা দাঙ্গার সৃষ্টি হলে আমি আমার কাগজ পত্র দেখাবো। সুতরাং বিচার আমার পক্ষে আসবে কারণ আমার জমি আমি দখল না করলে কে করবে। 
এটি একটি ভুল ধারনা। এটি করলে

প্রথমত কোন না কোন পক্ষের লোকজন হতাহত এমনকি খুন ও হতে পারে অথবা ক্ষয়ক্ষতি, লুটপাট হতে পারে। যে পরিস্থিতিতে নতুন করে ফৌজদারি মামলার উদ্ভূত হতে পারে। এতে দু পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এমনকি জমির প্রকৃত মালিক জমি ফিরে পাওয়ার বদলে ফৌজদারি মামলায় আসামি হয়ে জেলে ও যেতে হতে পারে। তখন মনে হবে, আমার জমি আমিই জেলে? আসলে আইন না জানার কারণে মানুষ জমির হকদার হয়েও আইনের মারপ্যাঁচে পড়ে জেল খাটতে হয়। 

দ্বিতীয়ত কাগজে কলমে যার জমি সে যদি দখলের চেষ্টা করে তাহলে আইন শৃঙ্খলার ব্যাপক অবনতি হতো। কারণ প্রভাবশালী যে কেউ অন্যের জমি দখল করা শুরু করতো আর বলতো জমি কাগজে কলমে আমার অথচ পরবর্তীতে দেখা যাচ্ছে তার কাগজ পত্রে ভুল আছে। তাই যার জমি সে প্রকৃত মালিক হলেও আইন তাকে দখলের চেষ্টাকে সমর্থন করে না। যদি করতো, দখল চেষ্টায় অসংখ্য খুন খারাবি বেড়ে যেত। 
আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে আইন প্রাথমিক ভাবে যিনি দখলে আছেন তিনিই দখলে থাকবেন যদিও তিনি জমির প্রকৃত মালিক নন যতক্ষন দেওয়ানি আদালতের জমির মালিকানা বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত না আসে বা ডিক্রি না আসে। এজন্য জমির প্রকৃত মালিক দখল ফেরত পাওয়ার জন্য উচিত হলো দেওয়ানি আদালতে মামলা করা। এটিই তার আইনি প্রতিকার। 



এবার দেখি জমি থেকে বেদখল হলে আইন কী কী সুরক্ষা দেয়? তামাদি মেয়াদ অনুসারে আলোচনা।

১. বেদখল হওয়ার ২ মাসের মধ্যে প্রতিকার:  এটি একমাত্র ফৌজদারি প্রতিকার। এটি সবচেয়ে বেশি কার্যকর, তৎক্ষণাৎ প্রতিকার। মামলার সিদ্ধান্ত দ্রুততার সাথে নেয়া হয়। দেওয়ানি মামলার মতো দীর্ঘসূত্রিতা নাই। ফৌজদারি কার্যবিধি, 
১৪৫ ধারা বলে জমি থেকে বেদখল হওয়ার ২ মাসের মধ্যে 
 প্রথম শ্রেণীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে এ মামলা করা হয়। এক্ষেত্রে একই আইনের ১৪৪ ধারা ও সংযুক্ত করা যায়। উক্ত আদালতে ১৪৫ ধারায় অভিযোগ দায়ের করার পর তিনি অভিযোগ টি আমলে নিলে অভিযুক্ত পক্ষকে একটি নোটিশ দিবেন। নোটিশে স্থান ও তারিখ উল্লেখ করে হাজির হয়ে বক্তব্য পেশ করার জন্য বলবেন। এছাড়া তিনি পুলিশকে দখল বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিতে পারেন। এটি একটি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কতৃক ফৌজদারি প্রতিকার। "যিনি দখলে আছেন তিনিই দখলে থাকবেন" এই নীতি অনুসরণ করা হয়। অর্থাৎ এ আদালতে জমির প্রকৃত মালিকানা কার যাচাই করা হয় না। শুধুমাত্র শান্তিপূর্ণ দখলে কে ছিল তা তদন্ত করে দেখা হয়। তাই শান্তিপূর্ণ দখলদার ব্যক্তি জমির প্রকৃত মালিকানা না হলেও তিনি এই প্রতিকার পাবেন অর্থাৎ তিনি দখল ফেরত পাবেন। এসময় প্রকৃত মালিকের প্রতিকার হলো দেওয়ানি আদালতে মামলা করা। আর প্রকৃত মালিক ও যদি অন্য কারো দ্বারা বেদখল হন তিনিও এই প্রতিকার পাবেন। এটিতে মামলার খরচাপাতি দেওয়ানি মামলা থেকে অনেক কম এবং সময় সাশ্রয়ী। তাই বেদখল হওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব এই ব্যবস্থা নিলে মামলার খরচ থেকে বেঁচে যায়। 

২. বেদখল হওয়ার ৬ মাসের মধ্যে প্রতিকার: বেদখল হওয়ার ২ মাস অতিক্রান্ত হয়ে গেলে এ পদক্ষেপ নেয়া যায়। অবশ্য ৬ মাসের মধ্যে এ পদক্ষেপ নিতে হবে। এটি একটি দেওয়ানি প্রতিকার। সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৯ ধারা মোতাবেক এই প্রতিকার প্রদান করা হয়। এজন্য দেওয়ানি আদালতে দখল উচ্ছেদের মামলা করতে হবে। এ মামলায় ১৪৫ ধারার মতো মালিকানা কার যাচাই করা হয় না। শুধু প্রকৃত দখল কার ছিল সেটিই প্রমাণ করা হয়। তাই মালিকানা বিষয়ক প্রমাণাদি এ মামলায় তেমন গুরুত্ব বহন করেনা। যিনি প্রমান করতে পারবেন, তিনি শান্তিপূর্ণ দখলে ছিলেন, অপরপক্ষ বেআইনি ভাবে অনুপ্রবেশ করে তাকে বেদখল করেছেন। তাকেই আদালত দখল ফেরত পেতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন। এই মামলার খরচ দেওয়ানি আদালতের চেয়ে কম অর্থাৎ মামলার মূল্যমানের উপর এডভোলারাম কোর্ট ফি এর অর্ধেক। এ মামলায় প্রকৃত মালিক যদি তার জমির অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় তার করণীয় হলো সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৮ ধারা ও ৪২ ধারায় মামলা করা।

৩. বেদখল হওয়ার ১২ বছরের মধ্যে প্রতিকার: এটি একটি চূড়ান্ত পর্যায়ের দেওয়ানি প্রতিকার। সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য, দীর্ঘস্থায়ী হলেও মামলার দীর্ঘসূত্রিতা ও কোর্ট ফি ও একটু বেশি। সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৮ ও ৪২ ধারা মোতাবেক স্বত্ব ঘোষণামূলক দখল উদ্ধারের মামলা করা হয়। অবশ্যই এখতিয়ারাধীন দেওয়ানি আদালতে মামলা করতে হবে। এ মামলায় দখল কার সেটি বিবেচ্য নয়। বিবেচ্য বিষয় হলো মালিকানা যাচাই যদিও মালিকানা প্রমানে দখল একটি অনুষঙ্গ মাত্র। জমির দলিল, খতিয়ান যাবতীয় কাগজ পত্র যাচাই বাছাই সাপেক্ষে আদালত প্রকৃত মালিক কে ঘোষণা করেন এবং তাকে দখল ফেরত দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।  মামলার মূল্যমানের উপর এডভোলারাম কোর্ট ফি দিয়ে এ মামলা করতে হবে। 

৪. বেদখল হওয়ার ১২ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলে প্রতিকার: বেদখল হওয়ার ১২ বছর অতিক্রান্ত হয়ে আইনি প্রতিকার পাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়ে। যদি ১২ বছর অতিক্রান্ত হয়ে যায় তামাদি আইনের ৫ ধারায় তামাদি মার্জনার দরখাস্ত দাখিল করে আদালত উক্তরূপ মামলা করা যায়। এক্ষেত্রে ১২ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার কারণ সমূহ আদালতের কাছে ব্যাখ্যা করতে হয়।

উপরিউক্ত তামাদি সময়সীমা নাবালক ও ওয়ারিশের ক্ষেত্রে একটু ব্যতিক্রম আছে।

উপরের আলোচনা থেকে দেওয়ানি মামলা মোকদ্দমার ক্ষেত্রে সময় একটি বড় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই জমি থেকে বেদখল হলে কাল ক্ষেপন না করে উচিত আইনি ব্যবস্থা নেয়া নতুবা আইনি প্রতিকার কালক্রমে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে।


©লেখক কতৃক সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত


লেখক: শহিদ রাসেল
আইনজীবী, চট্টগ্রাম জজ কোর্ট 






একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

6 মন্তব্যসমূহ

  1. ৫৮ বছর দখল না থাকলে,
    কিন্তু বৈধ কাগজ থাকলে ভূমি ফিরে পাওয়া যাবে কি,

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. আজকে গরুর মাংস দিয়ে ভাত খেয়েছেন। কাল তো নাও খেতে পারেন।

      মুছুন
  2. They are constantly updating their recreation offering guarantee you|to ensure you} never run out of interesting video games. As properly as 1xbet korea growing thought-provoking online slot video games that achieve big success globally, BTG is the inventor of the Megaways™ slots recreation mechanic. Megaways™, a tiered, linked, progressive jackpot prize system, modified the entire market with 117,649 ways to win. It is now licensed to giant quantity of|numerous|a lot of} recreation builders worldwide. With its steady pioneering ideas and confirmed observe report with the world’s largest operators, BTG is a global iGaming industry chief.

    উত্তরমুছুন
  3. জমির কাগজ পাতি সব ঠিক আছে। দখলে নাই। ফুফুদের অংস আমি কিনেছি। নামজারি হচ্চে না কেন জানতে পারি কি

    উত্তরমুছুন
  4. আমার দলিল আছে এসএ রেকর্ড আছে আরএস রেকর্ড আছে দখলে ও বিএস রেকড নাই আমি কি জমি পাবে

    উত্তরমুছুন
  5. বিগত ৬০ বছরের বেশি সময় ধরে আমাদের জমি দখলে নাই।তারা আমাদের জমি না শরীক দাবীতে দখল করে ভোগ করতেছে।
    আমাদের কাছে জমির কাগজ আছে। আমরা কি করলে জমি দখল পাবো

    উত্তরমুছুন

If you have any question, please let me know.